বছর ঘুরে হজের মৌসুম আসলেই আরবের পানে ছুটে চলে লাখো মুসলমান। প্রিয় বায়তুল্লাহ ও রওজা পাকের জিয়ারতে। হজের মৌসুম আসলেই সব জায়গায় শোনা যায়, সেই সুমধুর ধ্বনি: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.......
ফলে আনন্দের অপূর্ব হিল্লোলে দোল খেয়ে যায় প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়তন্ত্রী। প্রেম, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে তাদের অবুঝ মন। প্রিয়নবী সাঃ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিবিজড়িত সেই শহর, শুনতেই হৃদপিণ্ডটা কেমন যেন আতকে উঠে! মন ছুটে যেতে চায় দূর মরুর প্রান্তরে। অপূর্ব সুন্দর এবং মুগ্ধতায় ঘেরা পবিত্র তীর্থস্থান মক্কা-মদিনা।
মদিনা সে তো প্রাণের মদিনা,এ নামটি শোনার সাথে সাথে হৃদয়ের আয়নায় ভেসে ওঠে এক প্রশান্তিময় পবিত্র শহরের প্রতিচ্ছবি, যে পূণ্যভূমির সবুজ গম্বুজের ছায়ায় রওজায়ে আতহারে শুয়ে আছেন সৃষ্টির সেরা মহামানব প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ছোটবেলা থেকেই ভেতরে একটি স্বপন লালন করে আসছিলাম আর তা হলো আমিও একদিন বায়তুল্লাহর মুসাফির হবো। পবিত্র মক্কা-মদিনা জিয়ারত করে নিজের পিয়াসিত আত্নাকে মায়ে জমজমের শীতলতায় সিক্ত করবো। মিশরে আসার আগে প্রায়ই গুগল ম্যাপে দেখতাম মিশর থেকে মক্কা-মদিনার অবস্থান। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে, কিন্তু মিশর থেকে অনেকটা কাছে, তাই মনটা কিছুটা প্রশান্তি লাভ করত,খুজে পেতো কিছুটা স্বস্তি। অতঃপর মিশরে আগমন, অনেকের কাছেই মক্কা মদিনা যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করি, তারা শোনায় প্রশান্তিদায়ক কথা, এভাবেই কেটে গেল কয়েকটি মাস, উপস্থিত হল হজের মৌসুম।
অতঃপর
মদীনার পথে সফর,,,,,,,
সূর্য তখন অস্ত যাওয়ারঠিক আগ মুহূর্তে, রুমের বাইরে বসে কিছু কাগজপত্র গুছাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে মোবাইলের রিংটোনটা বেজে উঠলো! চমকে উঠলাম! মোবাইলটা হাতে নিতেই ওপাশ থেকে নাজমুল ভাইয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো।
" এই আপনি কি হজ্বে যাবেন? গেলে এই মুহূর্তে জাহাজ ঘাটে চলপ আসুন আধাঘন্টা পরেই জাহাজ ছেড়ে দেবে।( আগে মিশর থেকে জাহাজে মক্কায় যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এখন নেই)
আমি একথা শুনেই ফোনটা কেটে দিয়ে তড়িঘড়ি করে ব্যাগ গোছাতে লাগলাম,বেশি কিছু না নিয়েই কাঁধব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, আমার বিলম্ব হওয়ায় ওদিকে নাজমুল ভাই বিরক্ত হচ্ছিলেন, কাছের রাস্তা যেন ফুরায়না, দৌড়াতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। কি যে এক অবস্থা,,,,
অবশেষে গিয়ে পৌঁছলাম জাহাজ ঘাটে,সেখানে গিয়ে দেখি পরিচিত অনেক মুখ, অন্যপাশ থেকে ডেকে উঠলো কামরুল ভাই, যাক তাকে দেখে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম ক্লাসমেট তো তাই ।
এদিকে জাহাজে উঠে বসে পড়লাম, অনেক বাঙালি একসাথে, তাদের মধ্যে দু একজন আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো এ বিষয়টি কামরুল ভাই আঁচ করতে পেরে বলে উঠলো "এ মিয়া রেজা ভাই লুঙ্গি পরে আসছেন কেন? লজ্জায় মাথা নুয়ে ফেললাম। কিছুই তো করার ছিলনা। আবেগ আর ভালোবাসা কি পোশাক দেখে? উদ্দেশ্যে হলো পূণ্যভূমিতে পৌঁছানো।
জাহাজ চলছে তার আপন গতিতে, পুরো জাহাজ জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেই পবিত্র বাক্য,লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,,,,,,,
কি এক ভালোলাগা আর আনন্দের মুহূর্ত,যা ভাষায় ব্যক্ত করা কষ্টকর।
হঠাৎ করেই আওয়াজ আসলো
قم يا شيخ:لكي تتسحر
চোখটা মেলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলাম না। আমি কি তাহলে এতক্ষণ ঘুমে ছিলাম?
ইস যদি স্বপ্নের মাধ্যমেও প্রিয় নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত করতে পারতাম তাও তো অনেকটা প্রশান্তি লাভ করতাম।বিরহে আমার দুচোখ দিয়ে অশ্রুমালা গড়িয়প পড়েছিল। যদি বাস্তবে এমন হতো।
যাক একদিন ইনশাআল্লাহ আমিও বাইতুল্লাহ মেহমান হবো হাজরে আসওয়াদে চুমু খাবো, রহমতের চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে রাখবো।
নবীজির রওজার পাশে দাঁড়িয়ে মনের সব ভালবাসা আর আবেগ টুকু ঢেলে দিব।কবির ভাষায়
رخسار سے برقع کا ذر
ا پردہ اٹھا دو • للہ مجھے حسن خداداد دکھادو_
اے بحر کرم صدقہ حسین بن علی کا •پیاسا ہوں مجھے شربت دیدار پلا دو _
میں دور ہوں مجبور ہوں آے سید عالم•دیدار دکھاتے نہیں آواز سنادو
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন