রিপোর্ট প্রিন্ট

শেয়ার করুনঃ



কি শিখছে নতুন প্রজন্ম?

 




॥ কী শিখছে নতুন প্রজন্ম? ॥

.

সম্প্রতি ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ কর্তৃক প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের বেশ কিছু পাঠ এখন জাতীয় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বইয়ের ‘প্রসঙ্গ কথা’ অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে ধর্ম, বর্ণের বিষয়টি নাকি বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। অথচ বেশকিছু পাঠ এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মৌলিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের স্পষ্টত বিরুদ্ধে যাওয়া সত্বেও সেটার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করা হয়নি। অবশ্য এদেশের ক্রমবিকাশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কিংবা সমাজ ব্যবস্থার কথা তুলে ধরতে গৎবাঁধা কিছু নির্দিষ্ট বিষয়কে হাইলাইট করা এবং বিশেষ একটা ধর্মগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করা করা ছাড়া অভিন্ন কিছু এখনো পর্যন্ত খুব একটা দেখা যায় না। এটা আমাদের চিন্তার দৈন্যতা নাকি অদৃশ্য কোন প্রভাবকের সীমারেখা তা বোঝা বড়ই কঠিন।

.

বইয়ের মূল পাঠে ‘সম্প্রদায়’ অধ্যায়ে ‘খুশি আপা’ এদেশের মুসলিম সম্প্রদায় ‘অখুশি’ হওয়ার মতো বেশকিছু কথাবার্তা বলেছেন। ‘চিন্তার খোরাক’ দিতে গিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ‘মনে মনে’ নিজেদের জেন্ডার নির্ধারণ করার মতো মহাবিড়ম্বনা ও দুশ্চিন্তার খোরাকও দিয়ে ফেলেছেন। ‘মনে মনে’ ছেলে থেকে মেয়ে কিংবা মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাওয়া বইয়ের ঐ থিওরি যে দেশের আদমশুমারি থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের জন্য সংরক্ষিত বা পৃথকীকৃত সকল ব্যবস্থাপনাকে একেবারে হ-য-ব-র-ল করে দিবে তা আর সুস্থ মস্তিষ্কওয়ালাদের বুঝতে বাকি থাকার কথা না।

.

এবার আরেকটা অধ্যায়ে চোখ বুলানো যাক। অধ্যায়ের নাম ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা’। এখানেও ‘খুশি আপা’ এদেশের মুসলিম সমাজকে বিস্মিত করার মতো যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। তবে এবারের আঘাতটা আর ইশারা ইঙ্গিতে না। একদম সরাসরি ইসলামের ফরজ বিধান ‘পর্দা’-কে টার্গেট করে। ১২১ নং পেইজে ‘খুশি আপা’ বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’ থেকে যে পাঁচটি কাহিনী শোনালেন তা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে ইসলামের ‘ফরজ বিধান’ পর্দার প্রতি আলাদা একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর ছাঁপ ফেলতে যথেষ্ট। তাদেরকে পর্দাপ্রথা সম্পর্কে অবগত করতে ‘খুশি আপা’ ’অবরোধবাসিনী’ থেকে সুবিধামতো পাঁচটি কাহিনী শোনালেও পর্দা সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান এবং ক্ষেত্রবিশেষে এর শিথিলতার দিকগুলো নিয়ে যৌক্তিকভাবে কিছুই বলেন নি। একপেশে পর্দাকে কৌশলে কটাক্ষ করার কাহিনী আওড়ালেন শুধু। অবচেতন মন নিয়ে আমাদের কোমলমতি শিশুরা যখন এগুলো পড়বে; তখন পর্দার ব্যাপারে একটা নেগেটিভ মাইন্ডসেট নিয়ে তারা বড় হবে।

.

আবার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে মানব জাতির ক্রমবিকাশ বোঝাতে এমন কিছু ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে যা সুকৌশলে শিক্ষার্থীদের মনে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মতো ঈমান বি*ধ্বং*সী মতবাদের বীজ বপন করবে। নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকেও যা বিদ্যমান। জেনে রাখা দরকার— বিবর্তন প্রমাণিত কিন্তু ‘চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব’ প্রমা*ণিত ন*য়। সহিহ বুখারীর বর্ণনামতে— প্রথম নবি ও আদি পুরুষ আদম (আ.) ৬০ গজ লম্বাকৃতির ছিলেন। ধীরে ধীরে মানুষের আ*কৃতি ছোট হতে হতে মানুষ তার বর্তমান আকৃতি লাভ করেছে। এটা মানব জাতির বি*বর্তন। কিন্তু তথাকথিত ‘বি*বর্তনবাদ তত্ত্ব’ মানুষের মন-মস্তিষ্ক প্রসূত একটি ধারণা, যা কুরআনের সৃষ্টিদর্শনের সাথে সাং*ঘর্ষিক। বানর বা শিম্পাঞ্জি জাতীয় অন্য কোন প্রজাতি থেকে মানুষ এসেছে— এই মতবাদ সর্বৈব অ*সত্য। বিজ্ঞান যতো অগ্রসর হবে বিবর্তনবাদের ধারণা ততো অ*কার্যকর হয়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ।

.

লেখার কলেবর লম্বা হয়ে যাওয়ার আশংকায় সামান্য কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করলাম। আর ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’-এর কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে চাই না। মাত্র কয়েক দশক আগে ঘটে যাওয়া মুক্তিযু*দ্ধের ইতিহাস, দেশের সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত তথ্য বিভ্রাট ঘটিয়ে গত বছরের মতো এবারও ওনারা হাইকো*র্টের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে কেবল নবম-দশম শ্রেণির তিনটি বইয়ে তথ্যবিভ্রাটের ঘটনা মিলেছে ৩০ টিরও বেশি। আর সবচেয়ে বেশি ভুল ধরা পড়েছে— দেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযু*দ্ধ নিয়ে লেখায়। এটা খুবই দুঃখজনক।

.

জরুরী ভিত্তিতে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’-এর প্রতিটি বই, যারা প্রকৃতার্থেই বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ইসলামিক স্কলার; তাদের দিয়ে রিভাইজ ও রি-এডিট শেষে পুনঃমুদ্রণের আহ্বান জানাই।

0/আপনার মতামত জানান